প্রতিনিধি,হবিগঞ্জ ::হবিগঞ্জে করোনাকালেও বন্ধ নেই গ্রাম্য দাঙ্গা। প্রায় দিনই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘটছে খুনের ঘটনা। কোন দিন একাধিক খুনেরও ঘটনা ঘটছে। এর বাইরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে উল্লেখযোগ্য হারে। জেলায় গত ৪ মাসে ত্রিশটিরও বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে। অথচ ওই সময়ে করোনায় মারা গেছে ৬ জন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার চুনারুঘাট ও নবীগঞ্জে দু’টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিকেলে চুনারুঘাটে আপন বড় ভাইয়ের দায়ের আঘাতে খুন হন ছোট ভাই। পরে পুলিশ হত্যাকারী ও তার ছেলেকে আটক করে। বুধবার বিকেলে নবীগঞ্জেও ঘটে খুনের ঘটনা।এই হত্যা ও গ্রাম্য দাঙ্গার বিষয়ে পুলিশ বলছে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের জন্য সবাই ঘরবন্ধি থাকায় এবং বিভিন্ন কর্মজীবী মানুষও গ্রামে চলে আসায় ছোট-খাট বিষয় নিয়েও হত্যার ঘটনা ঘটছে। পূর্ব বিরোধ থেকেও হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েছে।
জেলা পুলিশের তথ্যমতে- মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চারমাসে ৩২টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। জুলাই মাসের ৪টিসহ মোট হত্যা ৩৬টি। এর মধ্যে মার্চ মাসে ১০টি, এপ্রিল মাসে ৬টি, মে মাসে ১০টি এবং জুন মাসে ৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
এই চার মাসে জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। এসব সংঘর্ষ-সংঘাতে আহত হয়েছে হাজারের উপরে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অর্থ সম্পদের। এর মধ্যে জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে লাখাই ও মাধবপুর উপজেলায়।
শুধু হত্যা এবং সংঘর্ষের ঘটনাই ঘটছে না। করোনায় গাড়ি চলাচল খুব বেশী না হলেও প্রতি মাসে ২০/৩০ জন লোক মারা যাচ্ছে এই জেলায়। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনা। গত ২৫ জুন বানিয়াচং উপজেলার পৃথক স্থানে তিনজন আত্মহত্যা করে।
এ ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. জহিরুল হক শাকিল বলেন, হবিগঞ্জে লোকজনের ইগো সমস্যা প্রকট। ফলে সামান্য বিষয় নিয়ে এখানে খুন ও দাঙ্গার ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার অভাব। পারিবারিকভাবে মূল্যবোধের শিক্ষা না থাকা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য এখানে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর বাহিরে এখানে লোকজনের মাঝে কর্মবিমুখতার প্রবণতা আছে। এই কর্মহীন লোকজন বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে।
এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। হবিগঞ্জে পুলিশ দাঙ্গা প্রতিরোধে সিনেমা পর্যন্ত তৈরি করেছে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না দাঙ্গা। এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, হবিগঞ্জ একটি দাঙ্গাপ্রবণ এলাকা। এই দাঙ্গা প্রতিরোধে আমি হবিগঞ্জে যোগদানের পর লিফলেট বিতরণ, পোস্টার লাগানো, উঠান বৈঠকের আয়োজন করেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে গ্রাম্য দাঙ্গার কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেছি। ফলে জেলায় গ্রাম্য দাঙ্গা অনেকটা কমে এসেছিল।তিনি বলেন, করোনার কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থির অবনতি হয়েছে সেটা বলা যাবে না। দাঙ্গার ঘটনায় এসব হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়নি। অধিকাংশ হত্যাকান্ড ঘটেছে মূলত পারিবারিক কলহের জেরে এবং সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে।
তিনি আরও বলেন, করোনার সময় মানুষ বাসা-বাড়িতে অবস্থান করছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও এলাকায় ফিরেছে অনেক মানুষ। ফলে বাড়িতে থেকে থেকে বিভিন্ন ছোটখাট বিষয় নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ, পাড়া-প্রতিবেশিদের সঙ্গে জায়গা নিয়ে, রাস্তা নিয়ে, বৃষ্টির পানি পড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে। যা সত্যিকার অর্থে পুলিশের কিছু করার নেই।
সিলেটবিবিসি/ ০৯ জুলাই ২০/রাকিব