মায়রুফ আহমদ খান :: ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি’ কিংবা ‘অপরাধী যতই চালাক হোক না কেনো, সে তার অপরাধের কোন না কোন চিহ্ন রেখে যায়’ কিংবা ‘কেচো খুড়তে সাপ’- এই প্রবাদগুলো হয়তো হবিগঞ্জের এমপি সাহেব জানেন না কিংবা ভূলে গেছেন। আর তাই তিনি দাবার চাল ভূল ঘরে দিয়ে ভাবছেন জয়ী হয়েছেন। কিন্তু তিনি হয়তো জানেনই না দাবার চালে ঘোড়া কিন্তু আড়াই ঘর যায়।
কে এই সুশান্ত? সুশান্তকে কয়জনই বা চিনে? কি আর এমন তার পরিচয়? সে তো একজন সাধারণ সুশান্তই। অন্যদিকে স্থানীয় সাংসদ আবু জাহির তিন তিনবারের সাংসদ। হবিগঞ্জের আওয়ামী লীগের সভাপতি- এন তেন আরো কতো কী? আমার এমপি ডটকমের প্রতিষ্টাতা, আমার ব্লগসহ সক্রিয় অনলাইন আওয়ামী লীগার সুশান্তকে কয়জন চিনে? এরকম ধারণা করেই আসলে ভুলটা করে বসলেন এমপি সাহেব। যে ভুলে সাধারণে অসাধারণ হয়ে উঠেছেন আমাদের সুশান্ত দাস গুপ্ত। আর পদে পদে পরাজয়ের শংকায় এমপি সাহেব।
বিষয়টা অনেকটা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে পাঠকদের জন্য। আরেকটু পরিষ্কার করে বলি- সুশান্ত দাস তার পত্রিকায় এমপি সাংসদের ‘বিপক্ষে’ যায় এরকম কয়েকটি নিউজ করেছেন। নিউজটি কোথায় প্রকাশিত হয়েছে? উত্তর- আমার হবিগঞ্জ নামক স্থানীয় পত্রিকায়। এছাড়া অনলাইন ভার্শনে নিউজটিও বেশ কয়েকজন শেয়ার করেছেন। সবমিলিয়ে স্থানীয় ১-২ হাজার প্রিন্ট পত্রিকার পাঠক আর অনলাইনের পাঠক ও শেয়ার বাবত ৮-১০ হাজার সহ মোট ১৫ হাজার কিংবা বড়জোর ২০ হাজার। তবুও সব যুক্তি বাদ দিয়ে ধরে নিলাম ১লক্ষ মানুষ নিউজটি সম্পর্কে হয়তো জেনেছিলেন। কিন্তু ওই সময়ে সারা বাংলাদেশে সুশান্ত দাদার জনপ্রিয়তা বর্তমানের সাথে তুলনা করলে ঐ সময়ের সুশান্তকে একজন সাধারণ সুশান্তই বলা যায়। কিন্তু সেই একজন সাধারণ সুশান্তকে গ্রেফতার করার পর কেন সুশান্তকে গ্রেফতার করা হলো? কোন নিউজের কারণে গ্রেফতার করা হলো? কে গ্রেফতার করিয়েছে? কে মামলা দিয়েছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর খুজতে খুজতে আওয়ামী লীগের বড় বড় পর্যায়ের নেতা থেকে সাধারণ জনগণ সেই নিউজগুলো পড়েছে। আগে যেখানে ১ লক্ষ মানুষ নিউজের ঘটনাটি জানতো এখন সেটা ছাড়িয়ে গেছে কয়েক কোটিতে। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাকর্মীসহ দেশের কয়েক কোটি মানুষ এখন জানেন যুদ্ধপরাধী মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর পরিবার-পরিজনকে কে হবিগঞ্জের আওয়ামী লীগে আশ্রয় দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর ২৫০০/- টাকার ত্রাণ বিতরণে ৯৯জন গরীবের ত্রাণের নাম্বারে একই নাম্বার দেওয়া বিএনপি থেকে আগত হাইব্রিড আওয়ামী লীগার স্থানীয় চেয়ারম্যান সেলিম কার হাত ধরে আওয়ামী লীগে এসেছেন এবং বর্তমানে কার মদদপুষ্ট? উত্তরগুলো পাঠকদেরও অজানা থাকার কথা নয়। এ যেনো কেচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা। আর এই উত্তরগুলো খুজতে গিয়ে সারাদেশে কোটি কোটি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন সাধারন থেকে অসাধারণ হয়ে উঠা নির্ভীক, সাহসী, সত্যের সহযাত্রী একজন সুশান্ত।
অতি চালাকী করতে গিয়ে এমপি সাহেব যে কাজ করেছেন সে কাজের প্রেক্ষিতেও সমালোচিত হচ্ছেন পুরো দেশজুড়ে। চালাকী করে নিজে কিংবা নিজের পরিজন দিয়ে মামলা না করে মামলা করিয়েছেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহির নামে এক সাংবাদিককে নিয়ে। এমনিতেই নিউজ প্রকাশের জেরে পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করায় এমপির বিরুদ্ধে সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ (এমপি সাহেবের পা-চাটা হবিগঞ্জের কতিপয় সাংবাদিক ছাড়া) তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। তারউপর সাংবাদিক হয়ে অন্য সাংবাদিক এবং সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা করায় এমপি যে ওইসব পা-চাটাদের কীভাবে পকেটে পুরেছেন সেটাও দেশের সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। দেশসেরা জাদরেল সাংবাদিকরা ওই পা-চাটা সাংবাদিককে যেকোন জাতীয় মিডিয়ায় থাকলে বহিষ্কারের দাবী জানিয়েছেন।
আরো হাস্যকর একটি বিষয় পাঠকদের সাথে শেয়ার না করে পারছি না, এমপি আবু জাহির স্থানীয় একটি পত্রিকার সভাপতিমন্ডলীতে আছেন। কিন্তু উনার সেই পত্রিকা তিন বছর ধরেই প্রকাশিত হচ্ছে না। সেকারণেই কি জেলাসি থেকে আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার বিরুদ্ধে সাংবাদিক দিয়ে সংবাদপত্র বন্ধ করার অপচেষ্টা। কে জানে হতেও তো পারে?
সারাদেশেই এখন যেনো একটিই আলোচনা এমপি আবু জাহিরের প্রভাবে ‘মগের মুল্লুক’ হবিগঞ্জ। এখানে উনি একা-ই রাজা। বাকীরা যেনো তার অধীনস্থ প্রজা। শুধু অধীনস্থ প্রজা নয় কেনা গোলাম-ই এমনটিই যেনো সাধারণ। যারাই এখানে তার অধীনস্থ না হয়ে বিরুদ্ধে সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করবে তাদের পরিণতিও সুশান্তর মতো হবে।
জয়তু মগের মুল্লুক হবিগঞ্জ,
জয়তু পা-চাটা সাংবাদিক
জয়তু প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ মেরে দেওয়া চেয়ারম্যান
জয়তু যুদ্ধপরাধীর আওয়ামী পরিবার
জয়তু বিজয়ী এমপি আবু জাহির।
লেখক: সাংবাদিক।