সিলেট জেলার পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, পুলিশের কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মাধ্যমে আকবরকে সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৯টায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল আমাদের কাছে একটি তথ্য ছিল সে (আকবর) ভারতে পালিয়ে যাবে। তাই আমরা সীমান্তবর্তী এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারি শুরু করেছিলাম। পরে আজ তাকে গ্রেপ্তার করি।’
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে ভারতের খাসিয়ারা আকবরকে আটক করেছে- এমন প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ভিডিও করা হয়নি। ওই ভিডিও কে, কোথায় করেছে তা আমাদের জানা নেই। এরকম কিছু দেখিনি। তবে তাকে জেলা পুলিশের কানাইঘাট থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।’
কেউ আকবরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ হস্তান্তর করেনি। কিন্তু আমরা পুলিশের সকল কাজে জনগণের সহযোগিতা নিই। তাকে গ্রেপ্তার করতে আমাদের কিছু বন্ধু সহযোগিতা করেছেন।’
প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ।
এদিকে প্রেস কনফারেন্স চলাকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষুব্ধ জনতা ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, আকবরের ফাঁসি চাই’ শ্লোগান দিতে থাকেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাদের স্লোগান চলতে থাকে।
এর আগে বিকেলে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কানাইঘাট থেকে আকবরকে সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসার উদ্দেশে রওয়ানা দেয় পুলিশ। তাই বিকেল থেকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় সিলেট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
জানা গেছে, আকবরকে সিলেটে নিয়ে আসার পর সিলেট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এক প্রেস কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
গতকাল রোববার গভীর রাতে ভারতের দনা সীমান্ত এলাকার খাসিয়াদের হেডম্যানরা রায়হান হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত এসআই আকবরকে আটক করে তাদের হেফাজতে রাখেন। পরে আজ সোমবার বেলা ১টার দিকে ভারতীয় খাসিয়ারা আকবরকে বাংলাদেশ সীমান্তে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীসহ লোকজনের কাছে বুঝিয়ে দেন। পরে এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কানাইঘাট থানার পুলিশ ও সিলেট জেলা পুলিশের একটি টিম তাকে জনতার কাছ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান। তাকে ওইদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহীসহ পুলিশ সদস্যরা। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান।
ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল নগরীর কাস্টঘরে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হয়েছেন। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে সিলেট মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে। মামলাটিতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই’র তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সিলেটবিবিসি/রাকিব/ডেস্ক/নভেম্বর ০৯,২০২০